December 22, 2024, 7:45 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
উচ্চ আদালতসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা মামলা নিস্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তার নিদের্শনার আলোকে হাইকোর্ট বিভাগের আটজন বিচারপতিকে দেশের আটটি বিভাগে নিষ্পত্তি না হওয়া মামলা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতার জন্য আরও আটজন কর্মচারীকে সাচিবিক দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়েছে। দুই দশক বা ২০ বছরের বেশি সময় আগের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। ইতোমধ্যে অগ্রগতিও দেখা দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ও স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায় বিভিন্ন মামলায় আসামিদের আপিল আবেদন করার নিয়ম না জানা, গুরুত্বপূর্ণ বা যে কোনো মামলায় নিয়মিত সাক্ষী উপস্থিত না হওয়া, বিচারিক (নিম্ন) আদালতের মামলায় উ” আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়ার ফলে বিচারকাজ বন্ধ থাকা, মামলা শুনানির জন্য মুলতবি রাখাসহ নানা কারণে অনেক মামলা ঝুলে আছে।
জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদেশে গত ২২ জুন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতগুলোতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়। চলতি বছরের ১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ ধরনের পাঁচ হাজার ৮৬১টি মামলা অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
দেশের অধস্তন প্রতিটি দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এখন সেই তালিকা চূড়ান্তের কাজ চলছে।
আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই দশকের বেশি সময় আগের মামলায় বিচার না হয়ে আটকে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে বিচার যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি বাড়ছে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি।
তিনি বলেন, অধস্তন আদালতের পক্ষ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মামলার সংখ্যা আমাদের কাছে আছে। এবার চলতি বছরের একটি সর্বশেষ সময় ধরে প্রত্যেক জেলা আদালতের তালিকা প্রেরণ করার জন্যে আমরা চিঠি দিয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাজ চলছে। সব আদালতের তথ্য না আসায় বিচারাধীন মামলার পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি জানান, প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব গ্রহণের পরই বিচারাধীন মামলার প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের নির্দেশ দেন। মামলার নথি গণনাপূর্বক এ সংখ্যা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছিল। এছাড়া পুলিশ বা অন্য কোনো তদন্তকারী সংস্থার কাছে তদন্তাধীন মামলার প্রকৃত সংখ্যা পৃথকভাবে নির্ধারণ করে পাঠানোরও নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।
বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই তালিকা প্রস্তুত হলে বিচারাধীন ও তদন্তাধীন মামলার প্রকৃত সংখ্যা বেরিয়ে আসবে। কারণ তদন্তাধীন মামলার সংখ্যাটা পাওয়া গেলেই দেশের আদালতসমূহে কত মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় তার প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দুই দশক ধরে ঝুলে থাকা মামলার মধ্যে ঢাকা জেলা আদালতে রয়েছে ৬২৩টি, গোপালগঞ্জে ১৬টি, রাজবাড়ীতে ১৪টি, নরসিংদীতে তিনটি, নারায়ণগঞ্জে ৫৫টি, মাদারীপুরে ২২টি, টাঙ্গাইলে ১২টি, গাজীপুরে ৩১টি, মানিকগঞ্জে ৬টি, ফরিদপুরে ১৯টি এবং কিশোরগঞ্জ জেলা আদালতে ৬৭টি।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা দেশের অধস্তন আদালতের মামলা নিষ্পত্তি তদারকির জন্য মনিটরিং কমিটি গঠন করা একটি ভালো উদ্যোগ। আশা করি এতে বিচারপ্রার্থীদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হবে।
সাইফুর রহমান জানান মনিটরিং কমিটি করার পর মামলা নিষ্পত্তি এবং কাজের গতি বেড়েছে। বিচারকরা পূর্ণ কর্মঘণ্টা ব্যবহার করছেন এখন। পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির জন্য সব সময়ই নির্দেশ ছিল। আশা করি ডিসেম্বরের মধ্যে এসব মামলা নিষ্পত্তি হবে।
মনিটরিং কমিটি নির্দেশ দিয়েছে, ২০০০ সালের আগের কোনো মামলা বিচারাধীন থাকতে পারবে না। এসব নিয়ে প্রধান বিচারপতিও কমিটির সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক করেছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন।
জানা গেছে ২০০০ সালের আগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫ হাজার ৮৬১টি। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় পুরোনো মামলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় ২০০০ সালের আগে দায়ের হওয়া বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৬১৫টি, যা এখনো অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। এসব মামলা ১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দেশের সব অধস্তন আদালত/ট্রাইব্যুনালকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঁচ বছরের অধিক পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের মার্চে এক নির্দেশনায় ১০ বছরের অধিক পুরোনো মামলা, আপিল ও রিভিশনসমূহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন সুপ্রিম কোর্ট। এরপর এসে ২২ জুন পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।
Leave a Reply